৯.৩.২ খরা (Drought)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - দুর্যোগের সাথে বসবাস | NCTB BOOK

খরা একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খরার সমর মাটিতে পানির পরিমাপ কমতে কমতে মাটি পানিশূন্য হয়ে যায় এবং এর ফলে মাটিতে গাছপালা বা শস্য জন্মাতে পারে না। ব্রিটিশরা একটানা দুই সপ্তাহ ০.২৫ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হলে তাকে খরা (Absolute Drought) আর একটানা ৪ সপ্তাহ ০.২৫ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত না হলে তাকে আংশিক খরা (Partial Drought) বলে। রাশিয়াতে একটানা ১০ দিন মোট ৫ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি না হলে তাকে খরা বলে আর আমেরিকাতে একটানা ৩০ দিন বা তার বেশি সময়ের মধ্যে যেকোনো ২৪ ঘণ্টায় ৬.২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি না হলে তারা ঐ অবস্থাকে খরা হিসেবে ধরে নেয়। খরা একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ (চিত্র ৯.০৪)। খরা হলে ফসল উৎপাদন কমে যায় এবং এটি দুর্ভিক্ষের কারণও হতে পারে। খরার ফলে শুধু মানুষ নয়, গবাদিপশুর জন্যও খাদ্যসংকট দেখা দেয়। কৃষিনির্ভর শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়, যেটি কর্মসংস্থানের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। খরার কারণে মাটির উর্বরতা কমে যায়। দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে দেশে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর) খরার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে ১৯৭৮-৭৯ সালে ভয়াবহ খরা হয়েছিল। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই খরায় ক্ষতির পরিমাণ ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ বন্যার চেয়েও বেশি ছিল।


কেন খরা হয়? খরা হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যার মাঝে অন্যতম হচ্ছে দীর্ঘদিন শুষ্ক আবহাওয়া থাকা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়া। বাষ্পীভবন এবং প্রস্বেদনের পরিমাণ বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি হলেও এমনটি ঘটতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বৃক্ষনিধন এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে উঠেছে, ফলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, যেটি খরা সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত কমে খরা সৃষ্টি হওয়ার জন্য পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের মেরু অঞ্চলে সৃষ্ট এল-নিনো (El-Nino) নামে জলবায়ুর পরিবর্তনচক্রকে দায়ী করা হচ্ছে। খরার জন্য দায়ী একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভের পানির মাত্রাতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়া। এছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন, উজান থেকে পানি সরিয়ে নেওয়া, পানি সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার অভাব, ওজোন স্তরের ক্ষয়— এগুলোও খরা সৃষ্টির জন্য দায়ী।


এখন প্রশ্ন হলো, খরা প্রতিরোধে বা খরা মোকাবিলার জন্য কী করা যেতে পারে? যেহেতু খরার মূল কারণ হলো পানির অপর্যাপ্ততা, তাই পানির সরবরাহ বাড়ানোই হচ্ছে খরা মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বাংলাদেশের প্রায় ৫৫টি নদীর উৎসস্থল ভারত। শুষ্ক মৌসুমে ভারতের ঐ সকল নদ- নদীর পানির গতিপথ পরিবর্তন এবং পানি প্রত্যাহার বাংলাদেশে খরার অন্যতম কারণ। এর আগে গঙ্গা নদীর পানিও ভারত একতরফাভাবে ব্যবহার করত। ১৯৯৬ সালে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তির কারণে বাংলাদেশ এখন শুষ্ক মৌসুমে পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে। গঙ্গার পানির চুক্তির মতো তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি বণ্টনের জন্য ভারতের সাথে পানি বণ্টন চুক্তি করার চেষ্টা চলছে, যেন শুষ্ক মৌসুমে ভারত একতরফাভাবে উজান থেকে পানি সরিয়ে নিতে না পারে ।
কিছু ফসল আছে যেগুলো মাটিতে পানি কম থাকলেও জন্মাতে পারে। যেমন: গম, পিঁয়াজ, কাউন ইত্যাদি। খরা পীড়িত এলাকার মানুষকে এ জাতীয় ফসল চাষ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। সেই সাথে সাথে যে সমস্ত ফসল উৎপাদনে অনেক বেশি পানির প্রয়োজন হয়, যেমন: ইরি ধান, সেগুলো ষে খরাপীড়িত এলাকার মানুষদের নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে। খরা মোকাবেলা করার জন্য পুকুর, নদ-নদী, খাল-বিল খনন করে পানি ধরে রেখে তা খরার সময় ব্যবহার করার জন্য সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি সৃষ্টি করে কিছু কিছু দেশ খরা মোকাবেলার চেষ্টা করেছে কিন্তু সেটি খুব একটা কার্যকর হয়নি।

 

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion